৪৮-৭২ ঘন্টায় ক্যাশ অন ডেলিভারি। ০১​৫​৮১১০০০০১​

ইতিহাস ও বয়ান
ইতিহাস ও বয়ান
0.00 ৳
0.00 ৳
PACKAGE

৩৬ জুলাই

এক হালি জুলাই

https://gronthik.com/web/image/product.template/2103/image_1920?unique=113455d

1,472.00 ৳ 1472.0 BDT 2,300.00 ৳

2,300.00 ৳

Not Available For Sale


This combination does not exist.

1 x র‍্যাপ-চার
[9789849976592] র‍্যাপ-চার
1 x অন্তর্বর্তী ভাবনা
[9789849976530] অন্তর্বর্তী ভাবনা
1 x মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম
[9789849976318] মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম
1 x গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ইসলাম রাজনীতি ও সমাজভাবনা
[9789849976547] গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ইসলাম রাজনীতি ও সমাজভাবনা
Out of Stock

র‍্যাপ-চার: 

বাংলাদেশে র‌্যাপ মিউজিকের প্রচলন একুশ শতকের প্রথম দশক হলেও জনপ্রিয় এই ধারার গানের উৎপত্তির ইতিহাস বেশ পুরোনো। র‌্যাপ মিউজিককে হিপ-হপ মিউজিকও বলা হয়। একটি বিশেষ শ্রেণির মিউজিক ও সাংস্কৃতিক ঘরানা হিসেবে হিপ-হপের জন্ম। বিশ শতকের ষাটের দশকের শেষের দিকে ও সত্তরের দশকের শুরুতে নিউইয়র্কের সাউথব্রোনস্ক এলাকায় হিপ-হপ বা র‌্যাপ মিউজিক আত্মপ্রকাশ করে। তবে এই সঙ্গীত মূলত আফ্রিকান-আমেরিকান, আফ্রো-লেটিন ও আফ্রো-কেরিবিয়ান সঙ্গীতের নির্যাসকে ধারণ করে। মূলত এর জনপ্রিয়তা তরুণদের মধ্যে। রাষ্ট্রযন্ত্রের জবরদস্তি-নিষ্পেষণ-বৈষম্য ও সামাজিক অসন্তোষ র‌্যাপ গানের মূল কারণ হিসেবে কাজ করে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দ্রোহপ্রকাশেও র‌্যাপ গান এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। হিপ-হপ মিউজিক আফ্রিকান বামবাতা ও ইউনিভার্সাল জুলু জাতির নেতৃত্বে মাদক ও ভায়োলেন্স বিরোধী সামাজিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে ব্ল্যাক কমিউনিটির পরিবেশনার মাধ্যমেই র‌্যাপ সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ক্রমান্বয়ে সঙ্গীতের এই ধারা হিপ-হপ কালচারের একটি ধারা সৃষ্টি করে যাতে চারটি মূল উপাদান যুক্ত থাকে: ১. র‌্যাপিং ২. টার্নটেবিল স্ট্রেচিং (মঞ্চে জোর দিয়ে ঘোরা) ৩. ব্রেকড্যান্সিং ও ৪. গ্রাফিতি আঁকা ও লেখা। অর্থের জোগান ও গ্রহণযোগ্যতার অভাবের জন্য ১৯৭৯ সালের আগে হিপ-হপ মিউজিক রেডিও বা টেলিভিশনে প্রচারের জন্য অফিশিয়ালি রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। 

র‌্যাপিং হচ্ছে মূলত অনুভূতি প্রকাশের জন্য কণ্ঠের একটি বিশেষ শৈল্পিক প্রকাশ যাতে ছন্দ, ছন্দময় কথা এবং রাস্তার আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এটা সাধারণভাবে তীব্র ছন্দময় ভাষা ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। কবিতার সঙ্গে এখানেই র‌্যাপ গানের পার্থক্য। আধুনিক র‌্যাপ মিউজিকের অগ্রদূত হচ্ছে ব্লুজ ও জাজ স্টাইলের বৈশিষ্ট্যযুক্ত পশ্চিম আফ্রিকান গ্রিওট ঐতিহ্য। র‌্যাপ গান বিস্তৃত হিপ-হপ কালচারের একটি অংশ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। তবে হিপ-হপ মিউজিক টার্মটি র‌্যাপ মিউজিকের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত শহুরে শিক্ষিত তরুণদের বাইরে র‌্যাপের চর্চা ও আবেদন ছিলো না বললেই চলে। প্রসার এত ক্ষুদ্র যে তা বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে সেই অর্থে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে বাণিজ্যিক সফলতা আসেনি, হয়ত সে চিন্তাও র‌্যাপারদের মধ্যে ছিল না। একটি নির্দিষ্টি উচ্চবিত্ত গোষ্ঠীর তরুণ-যুবকদের বিনোদন হিসেবেই র‌্যাপ আত্মপ্রকাশ পেয়েছিল। ১৯৯৩ সালে আশরাফ বাবু, পার্থ বড়ুয়া আর আজম বাবু এই তিনজন ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা নামের একটি অ্যালবাম করেছিল যা তুলনামূলকভাবে শহুরে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করে। তাদের অ্যালবামটি বাংলা র‍্যাপের প্রথম অ্যালবাম। ২০০০ সালের পরে, সঙ্গীতের এই নতুন ধারা বাংলাদেশের তরুণ সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষ করে শহুরে যুবকেরা র‍্যাপের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনা, মতাদর্শ এবং সামাজিক অবস্থা প্রকাশ করতে শুরু করে। ২০০৪ সালে গঠিত হয় স্টোইক ব্লিস নামক হিপ-হপ ক্রু, যারা বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার সমন্বয়ে একটি নতুন ফিউশন র‍্যাপ শৈলী সৃষ্টি করে। এই দলটি প্রথমে ব্লগের মাধ্যমে তাদের গান ছড়িয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুরু হলে গানটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে। স্টোইক ব্লিস ২০০৬ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম Light Years Ahead প্রকাশ করে। প্রকাশের পরপরই অ্যালবামটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই অ্যালবামের মাধ্যমেই বাংলা র‍্যাপ মূলধারার সঙ্গীত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।

একুশ শতকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের একটি অন্যতম ভাষা হয়ে ওঠে বাংলা র‍্যাপ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে র‍্যাপ একটি প্রতিবাদী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে দেশীয় রাজনৈতিক অবস্থা, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং তরুণদের ক্ষোভের প্রতিফলন। বিশেষভাবে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের মধ্যে এই র‍্যাপ সঙ্গীত এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। র‍্যাপ গানগুলোতে একদিকে যেমন আন্দোলনের প্রতিবাদী ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য এক ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে র‌্যাপারদের কণ্ঠে উচ্চারিত অকুতোভয় প্রতিবাদের ভাষা, বলিষ্ঠ সুরেলা আওয়াজ লাখো মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। দুঃশাসনের লৌহকবাট ভাঙতে সাহস জুগিয়েছে। আন্দোলনকারী জনতা মুক্তির লক্ষ্যমুখে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে। র‌্যাপাররা শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, হুমকি-নির্যাতন, জেল-জুলুমের ভয়কে উপেক্ষা করেই মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। এককথায় জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের র‌্যাপ গায়কদের অবদান ছিল শ্রদ্ধা করার মতো। ফলে আমরা বাংলাদেশের র‌্যাপসঙ্গীতের ওইসব দামাল গায়কদের ঐতিহাসিক অবদানকে দেশবাসীর সামনে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেছি। সেই প্রচেষ্টার ফলাফল এই বইটি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে বাংলাদেশের র‌্যাপসঙ্গীত নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বই ‌র‌্যাপ-চার। বইটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে থাকছে র‌্যাপ সঙ্গীতের বিবর্তন, ভঙ্গিমা ও সামাজিক-রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে পর্যালোচনা। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কয়েকজন র‌্যাপগায়কের সাক্ষাৎকার। এবং সবশেষে তৃতীয় পর্বে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নির্বাচিত কিছু র‌্যাপসঙ্গীতের লিরিক্স। সময় স্বল্প ছিল বলে কিছু অস্পূর্ণতা ও ত্রুটি থেকে যেতে পারে। পরবর্তী সংস্করণে সেই সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে।

বাংলা র‌্যাপসঙ্গীত এগিয়ে যাক, র‌্যাপ গণমানুষের প্রতিবাদ-দ্রোহের কণ্ঠ ধারণ করুক বলিষ্ঠ নিনাদে।



অন্তর্বর্তী ভাবনা : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: অন্তর্বর্তী ভাবনা বইটির অধিকাংশ নিবন্ধ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লেখা। নিবন্ধগুলোতে সমসাময়িক বিতর্কের পরিষ্কার ছাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারের অভিমুখ নির্ধারণ করার দিকেই আমার প্রধান মনোযোগ ছিল। সরকার, রাষ্ট্র, জনগণ, সংবিধান, নির্বাচন, গণপরিষদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে।


স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও কেন বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে যায়, এই প্রশ্ন ছিল আমার অন্যতম কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানের বিষয়। এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার পশ্চাদপদ ও গণবিরোধী ধারণার সমালোচনা করতে হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত গণপরিষদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের ধ্রুপদী পথ। অথচ দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নামে গণঅভ্যুত্থানকে নিছক রেজিম পরিবর্তনে সংকুচিত করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের মতো বিরাট ঐতিহাসিক বাঁকবদলের মুহূর্তকে স্রেফ ক্ষমতার হাতবদলের মধ্য দিয়ে ছেঁটে ফেলা নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে এই ভুল থেকে রক্ষা করতে হবে।

সর্বিক পরিস্থিতি বিচারে বর্তমানে রাজনীতিতে দুটি প্যারাডাইম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে জুলাইয়ের ‘গণঅভ্যুত্থান প্যারাডাইম’, অন্যদিকে জানুয়ারির ‘রেজিম পরিবর্তন প্যারাডাইম’। বিদ্যমান ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর তথা জানুয়ারি প্যারাডাইম ব্যর্থ হওয়ার পর জুলাই প্যারাডাইম হাজির ও সফল হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্ন সামনে আসার পর দেখা গেল, গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ ক্ষমতার হাত বদলে সংকুচিত করার তৎপরতার মাধ্যমে জানুয়ারি প্যারাডাইম শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে।গণঅভ্যুত্থানের পরের কাজ হচ্ছে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু রেজিম পরিবর্তন প্যারাডাইম গণঅভ্যুত্থানকে সংবিধানের ভেতর এঁটে দিয়ে, বিদ্যমান ব্যবস্থা, সংবিধান অক্ষুণ্ন রেখে স্রেফ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। এ কাজ হবে গণঅভ্যুত্থানের সাথে মস্ত বড় বেঈমানি।

মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম: 

এই বহির প্রথম ইন্টারভিউটা দুই হাজার চোদ্দতে, আর শেষ ইন্টারভিউটা দুই হাজার চব্বিশের ডিসেম্বরে, আফটার ফ্যাসিস্ট সময়ে। মানে, শাহবাগের আজান থেকে চব্বিশের অভ্যুত্থান, ফ্যাসিস্ট ও আফটার ফ্যাসিস্ট, পুরো সময়ের এই আলাপ।

বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে এখন। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে যে আলাপগুলো করতাম, তার বড় অংশরে ফ্যাসিবাদের স্মৃতিকথা বলতাম। দেখা যাচ্ছে, আফটার ফ্যাসিস্ট সময়েও এই স্মৃতিকথাই লিখতে হইতেছে আমাদেরকে। কারণ, ফ্যাসিস্টের পতন মানেই ফ্যাসিবাদের পতন না। এইটা একটা আইডিওলজি, সচেতন চয়েস আর লাইফস্টাইল, যার থেকে স্রেফ একটা রেজিম বা ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে বেরুনো সম্ভব না।

ফ্যাসিবাদ মানুষকে লঘু করে। এখানে মানুষ জাতীয়তাবাদ আর অহমের টুল মাত্র হয়ে রয়, যার কোন কনসেন্ট হাজির থাকে না। বা থাকারে অসম্ভব কইরা তোলে। ফলে, ফ্যাসিবাদে মানুষের রুহ থাকে না। আমরা বহু বছর ধইরা এই লঘুতার ভেতরে বসবাস করেছি। সাহিত্য শিল্প ও রাজনীতিতে এই লঘুতারে উদযাপন করেছি, রুহহীন হয়ে।

এই রুহহীন অবস্থা গণহতাশার দর্শন প্রমোট করে। ফলে, ফ্যাসিবাদের দিনগুলোতে তরুণদের হতাশা, ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যা বেড়েছিল। ফ্যাসিবাদের ভেতরের কনসেন্টহীনতা ও স্থবিরতার সাথে এই আত্মহত্যাগুলোর সম্পর্ক ছিল। আমরা শেখ হাসিনার অধীনে একটা চিরস্থায়ী জরুরি অবস্থার ভেতরে আটকে পড়েছিলাম। তাই, এই আত্মহত্যাগুলোকেও আমরা হত্যা বলতাম এবং এই খুনের গুহা থেকে বেরুনোর কথা বলতাম।

এই অবস্থা অতিক্রমের জন্য তরুণদের সমন্বিত ওঙ্কার ও জন-অভ্যুত্থানের জরুরতের কথা বলতাম।

মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম হল, আমাদের সেই অতিক্রমের আলাপ।

শাহবাগের আজান থেকে চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরের যে বাংলাদেশে ঢুকলাম আমরা, এই নতুন বাংলাদেশে সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে যে নতুন পরিবর্তন চাইছি আমরা, এবং একটা নতুন সুগন্ধি বাগানে ঢুকে পড়তে চাইছি এখন, তা কেমন?


গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ইসলাম রাজনীতি ও সমাজভাবনা: 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে পেয়েছি। এখানে রয়েছে পরিবর্তন ও সংস্কারের অনেক সুযোগ। প্রস্তাব আসছে, কিছু পরিবর্তনও হচ্ছে, কিন্তু সবই ভাসাভাসা। যতক্ষণ না মানুষের মন ও মননে পরিবর্তন আসে, ব্যবস্থার পরিবর্তন কোনো ফলই বয়ে আনবে না। এমনকি সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ও ইনসাফপূর্ণ সংবিধানও স্বৈরাচার জন্ম দেবে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও নতুন শেখ হাসিনা হতে পথ আটকাবে না। এই জন্য আমরা বলি পরিবর্তনটা গোড়ায় করতে, সময়সাপেক্ষ হলেও এই পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নাই। 

 এই বইতে চিহ্নিত করা হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আনলে তা ‘মৌলিক সংস্কার’ হবে। এবং প্রতিটি প্রশ্নেরই জওয়াব দেওয়া হয়েছে শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি ও বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসির মতো দার্শনিক আলেমদের কর্মতৎপরতার সিলসিলার মধ্য দিয়ে।

Publisher

গ্রন্থিক প্রকাশন

Language

বাংলা

Country

Bangladesh

Format

হার্ডব্যাক

র‍্যাপ-চার: 

বাংলাদেশে র‌্যাপ মিউজিকের প্রচলন একুশ শতকের প্রথম দশক হলেও জনপ্রিয় এই ধারার গানের উৎপত্তির ইতিহাস বেশ পুরোনো। র‌্যাপ মিউজিককে হিপ-হপ মিউজিকও বলা হয়। একটি বিশেষ শ্রেণির মিউজিক ও সাংস্কৃতিক ঘরানা হিসেবে হিপ-হপের জন্ম। বিশ শতকের ষাটের দশকের শেষের দিকে ও সত্তরের দশকের শুরুতে নিউইয়র্কের সাউথব্রোনস্ক এলাকায় হিপ-হপ বা র‌্যাপ মিউজিক আত্মপ্রকাশ করে। তবে এই সঙ্গীত মূলত আফ্রিকান-আমেরিকান, আফ্রো-লেটিন ও আফ্রো-কেরিবিয়ান সঙ্গীতের নির্যাসকে ধারণ করে। মূলত এর জনপ্রিয়তা তরুণদের মধ্যে। রাষ্ট্রযন্ত্রের জবরদস্তি-নিষ্পেষণ-বৈষম্য ও সামাজিক অসন্তোষ র‌্যাপ গানের মূল কারণ হিসেবে কাজ করে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দ্রোহপ্রকাশেও র‌্যাপ গান এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। হিপ-হপ মিউজিক আফ্রিকান বামবাতা ও ইউনিভার্সাল জুলু জাতির নেতৃত্বে মাদক ও ভায়োলেন্স বিরোধী সামাজিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে ব্ল্যাক কমিউনিটির পরিবেশনার মাধ্যমেই র‌্যাপ সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ক্রমান্বয়ে সঙ্গীতের এই ধারা হিপ-হপ কালচারের একটি ধারা সৃষ্টি করে যাতে চারটি মূল উপাদান যুক্ত থাকে: ১. র‌্যাপিং ২. টার্নটেবিল স্ট্রেচিং (মঞ্চে জোর দিয়ে ঘোরা) ৩. ব্রেকড্যান্সিং ও ৪. গ্রাফিতি আঁকা ও লেখা। অর্থের জোগান ও গ্রহণযোগ্যতার অভাবের জন্য ১৯৭৯ সালের আগে হিপ-হপ মিউজিক রেডিও বা টেলিভিশনে প্রচারের জন্য অফিশিয়ালি রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। 

র‌্যাপিং হচ্ছে মূলত অনুভূতি প্রকাশের জন্য কণ্ঠের একটি বিশেষ শৈল্পিক প্রকাশ যাতে ছন্দ, ছন্দময় কথা এবং রাস্তার আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এটা সাধারণভাবে তীব্র ছন্দময় ভাষা ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। কবিতার সঙ্গে এখানেই র‌্যাপ গানের পার্থক্য। আধুনিক র‌্যাপ মিউজিকের অগ্রদূত হচ্ছে ব্লুজ ও জাজ স্টাইলের বৈশিষ্ট্যযুক্ত পশ্চিম আফ্রিকান গ্রিওট ঐতিহ্য। র‌্যাপ গান বিস্তৃত হিপ-হপ কালচারের একটি অংশ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। তবে হিপ-হপ মিউজিক টার্মটি র‌্যাপ মিউজিকের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত শহুরে শিক্ষিত তরুণদের বাইরে র‌্যাপের চর্চা ও আবেদন ছিলো না বললেই চলে। প্রসার এত ক্ষুদ্র যে তা বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে সেই অর্থে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে বাণিজ্যিক সফলতা আসেনি, হয়ত সে চিন্তাও র‌্যাপারদের মধ্যে ছিল না। একটি নির্দিষ্টি উচ্চবিত্ত গোষ্ঠীর তরুণ-যুবকদের বিনোদন হিসেবেই র‌্যাপ আত্মপ্রকাশ পেয়েছিল। ১৯৯৩ সালে আশরাফ বাবু, পার্থ বড়ুয়া আর আজম বাবু এই তিনজন ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা নামের একটি অ্যালবাম করেছিল যা তুলনামূলকভাবে শহুরে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করে। তাদের অ্যালবামটি বাংলা র‍্যাপের প্রথম অ্যালবাম। ২০০০ সালের পরে, সঙ্গীতের এই নতুন ধারা বাংলাদেশের তরুণ সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষ করে শহুরে যুবকেরা র‍্যাপের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনা, মতাদর্শ এবং সামাজিক অবস্থা প্রকাশ করতে শুরু করে। ২০০৪ সালে গঠিত হয় স্টোইক ব্লিস নামক হিপ-হপ ক্রু, যারা বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার সমন্বয়ে একটি নতুন ফিউশন র‍্যাপ শৈলী সৃষ্টি করে। এই দলটি প্রথমে ব্লগের মাধ্যমে তাদের গান ছড়িয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুরু হলে গানটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে। স্টোইক ব্লিস ২০০৬ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম Light Years Ahead প্রকাশ করে। প্রকাশের পরপরই অ্যালবামটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই অ্যালবামের মাধ্যমেই বাংলা র‍্যাপ মূলধারার সঙ্গীত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।

একুশ শতকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের একটি অন্যতম ভাষা হয়ে ওঠে বাংলা র‍্যাপ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে র‍্যাপ একটি প্রতিবাদী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে দেশীয় রাজনৈতিক অবস্থা, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং তরুণদের ক্ষোভের প্রতিফলন। বিশেষভাবে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের মধ্যে এই র‍্যাপ সঙ্গীত এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। র‍্যাপ গানগুলোতে একদিকে যেমন আন্দোলনের প্রতিবাদী ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য এক ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে র‌্যাপারদের কণ্ঠে উচ্চারিত অকুতোভয় প্রতিবাদের ভাষা, বলিষ্ঠ সুরেলা আওয়াজ লাখো মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। দুঃশাসনের লৌহকবাট ভাঙতে সাহস জুগিয়েছে। আন্দোলনকারী জনতা মুক্তির লক্ষ্যমুখে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে। র‌্যাপাররা শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, হুমকি-নির্যাতন, জেল-জুলুমের ভয়কে উপেক্ষা করেই মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। এককথায় জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের র‌্যাপ গায়কদের অবদান ছিল শ্রদ্ধা করার মতো। ফলে আমরা বাংলাদেশের র‌্যাপসঙ্গীতের ওইসব দামাল গায়কদের ঐতিহাসিক অবদানকে দেশবাসীর সামনে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেছি। সেই প্রচেষ্টার ফলাফল এই বইটি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে বাংলাদেশের র‌্যাপসঙ্গীত নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বই ‌র‌্যাপ-চার। বইটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে থাকছে র‌্যাপ সঙ্গীতের বিবর্তন, ভঙ্গিমা ও সামাজিক-রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে পর্যালোচনা। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কয়েকজন র‌্যাপগায়কের সাক্ষাৎকার। এবং সবশেষে তৃতীয় পর্বে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নির্বাচিত কিছু র‌্যাপসঙ্গীতের লিরিক্স। সময় স্বল্প ছিল বলে কিছু অস্পূর্ণতা ও ত্রুটি থেকে যেতে পারে। পরবর্তী সংস্করণে সেই সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে।

বাংলা র‌্যাপসঙ্গীত এগিয়ে যাক, র‌্যাপ গণমানুষের প্রতিবাদ-দ্রোহের কণ্ঠ ধারণ করুক বলিষ্ঠ নিনাদে।



অন্তর্বর্তী ভাবনা : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: অন্তর্বর্তী ভাবনা বইটির অধিকাংশ নিবন্ধ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লেখা। নিবন্ধগুলোতে সমসাময়িক বিতর্কের পরিষ্কার ছাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারের অভিমুখ নির্ধারণ করার দিকেই আমার প্রধান মনোযোগ ছিল। সরকার, রাষ্ট্র, জনগণ, সংবিধান, নির্বাচন, গণপরিষদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ এ বইয়ে আলোচিত হয়েছে।


স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও কেন বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে যায়, এই প্রশ্ন ছিল আমার অন্যতম কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানের বিষয়। এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার পশ্চাদপদ ও গণবিরোধী ধারণার সমালোচনা করতে হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত গণপরিষদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের ধ্রুপদী পথ। অথচ দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার নামে গণঅভ্যুত্থানকে নিছক রেজিম পরিবর্তনে সংকুচিত করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের মতো বিরাট ঐতিহাসিক বাঁকবদলের মুহূর্তকে স্রেফ ক্ষমতার হাতবদলের মধ্য দিয়ে ছেঁটে ফেলা নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে এই ভুল থেকে রক্ষা করতে হবে।

সর্বিক পরিস্থিতি বিচারে বর্তমানে রাজনীতিতে দুটি প্যারাডাইম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে জুলাইয়ের ‘গণঅভ্যুত্থান প্যারাডাইম’, অন্যদিকে জানুয়ারির ‘রেজিম পরিবর্তন প্যারাডাইম’। বিদ্যমান ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর তথা জানুয়ারি প্যারাডাইম ব্যর্থ হওয়ার পর জুলাই প্যারাডাইম হাজির ও সফল হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্ন সামনে আসার পর দেখা গেল, গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ ক্ষমতার হাত বদলে সংকুচিত করার তৎপরতার মাধ্যমে জানুয়ারি প্যারাডাইম শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে।গণঅভ্যুত্থানের পরের কাজ হচ্ছে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু রেজিম পরিবর্তন প্যারাডাইম গণঅভ্যুত্থানকে সংবিধানের ভেতর এঁটে দিয়ে, বিদ্যমান ব্যবস্থা, সংবিধান অক্ষুণ্ন রেখে স্রেফ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। এ কাজ হবে গণঅভ্যুত্থানের সাথে মস্ত বড় বেঈমানি।

মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম: 

এই বহির প্রথম ইন্টারভিউটা দুই হাজার চোদ্দতে, আর শেষ ইন্টারভিউটা দুই হাজার চব্বিশের ডিসেম্বরে, আফটার ফ্যাসিস্ট সময়ে। মানে, শাহবাগের আজান থেকে চব্বিশের অভ্যুত্থান, ফ্যাসিস্ট ও আফটার ফ্যাসিস্ট, পুরো সময়ের এই আলাপ।

বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে এখন। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে যে আলাপগুলো করতাম, তার বড় অংশরে ফ্যাসিবাদের স্মৃতিকথা বলতাম। দেখা যাচ্ছে, আফটার ফ্যাসিস্ট সময়েও এই স্মৃতিকথাই লিখতে হইতেছে আমাদেরকে। কারণ, ফ্যাসিস্টের পতন মানেই ফ্যাসিবাদের পতন না। এইটা একটা আইডিওলজি, সচেতন চয়েস আর লাইফস্টাইল, যার থেকে স্রেফ একটা রেজিম বা ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে বেরুনো সম্ভব না।

ফ্যাসিবাদ মানুষকে লঘু করে। এখানে মানুষ জাতীয়তাবাদ আর অহমের টুল মাত্র হয়ে রয়, যার কোন কনসেন্ট হাজির থাকে না। বা থাকারে অসম্ভব কইরা তোলে। ফলে, ফ্যাসিবাদে মানুষের রুহ থাকে না। আমরা বহু বছর ধইরা এই লঘুতার ভেতরে বসবাস করেছি। সাহিত্য শিল্প ও রাজনীতিতে এই লঘুতারে উদযাপন করেছি, রুহহীন হয়ে।

এই রুহহীন অবস্থা গণহতাশার দর্শন প্রমোট করে। ফলে, ফ্যাসিবাদের দিনগুলোতে তরুণদের হতাশা, ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যা বেড়েছিল। ফ্যাসিবাদের ভেতরের কনসেন্টহীনতা ও স্থবিরতার সাথে এই আত্মহত্যাগুলোর সম্পর্ক ছিল। আমরা শেখ হাসিনার অধীনে একটা চিরস্থায়ী জরুরি অবস্থার ভেতরে আটকে পড়েছিলাম। তাই, এই আত্মহত্যাগুলোকেও আমরা হত্যা বলতাম এবং এই খুনের গুহা থেকে বেরুনোর কথা বলতাম।

এই অবস্থা অতিক্রমের জন্য তরুণদের সমন্বিত ওঙ্কার ও জন-অভ্যুত্থানের জরুরতের কথা বলতাম।

মেমোরিজ অব ফ্যাসিজম হল, আমাদের সেই অতিক্রমের আলাপ।

শাহবাগের আজান থেকে চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরের যে বাংলাদেশে ঢুকলাম আমরা, এই নতুন বাংলাদেশে সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে যে নতুন পরিবর্তন চাইছি আমরা, এবং একটা নতুন সুগন্ধি বাগানে ঢুকে পড়তে চাইছি এখন, তা কেমন?


গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ইসলাম রাজনীতি ও সমাজভাবনা: 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে পেয়েছি। এখানে রয়েছে পরিবর্তন ও সংস্কারের অনেক সুযোগ। প্রস্তাব আসছে, কিছু পরিবর্তনও হচ্ছে, কিন্তু সবই ভাসাভাসা। যতক্ষণ না মানুষের মন ও মননে পরিবর্তন আসে, ব্যবস্থার পরিবর্তন কোনো ফলই বয়ে আনবে না। এমনকি সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ও ইনসাফপূর্ণ সংবিধানও স্বৈরাচার জন্ম দেবে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও নতুন শেখ হাসিনা হতে পথ আটকাবে না। এই জন্য আমরা বলি পরিবর্তনটা গোড়ায় করতে, সময়সাপেক্ষ হলেও এই পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নাই। 

 এই বইতে চিহ্নিত করা হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আনলে তা ‘মৌলিক সংস্কার’ হবে। এবং প্রতিটি প্রশ্নেরই জওয়াব দেওয়া হয়েছে শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি ও বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসির মতো দার্শনিক আলেমদের কর্মতৎপরতার সিলসিলার মধ্য দিয়ে।

Publisher

গ্রন্থিক প্রকাশন

Language

বাংলা

Country

Bangladesh

Format

হার্ডব্যাক

রিসেন্ট ভিউ বই
Your Dynamic Snippet will be displayed here... This message is displayed because you did not provided both a filter and a template to use.
WhatsApp Icon