বইয়ের প্রত্যেকটা নির্যাতনের ঘটনা সত্য। একটি ঘটনাও সম্পাদক নিজ থেকে বানিয়ে লিখেননি। নোংরা রাজনীতির নামে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে, এমন ২১ জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সত্য ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা ‘গেস্টরুম থেকে বলছি’ বইটি।
বইয়ের কাজটা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে গিয়েছে। কতটা পাষাণ হতে পারে মানুষ! একটা ছেলের রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতেই পারে, তাই বলে এভাবে নির্যাতন করা লাগবে? নির্যাতনের ঘটনাগুলো পড়লে আপনি আঁতকে উঠবেন। একজন শিক্ষার্থীকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে হকিস্টিক, এসএসের পাইপ, রড, স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হচ্ছে। কখনো-বা প্লাস দিয়ে হাত-পায়ের নখগুলো টেনে তুলে ফেলছে। কান টেনে ছিঁড়ে ফেলছে। শরীরে গরম পানি ঢেলে দিচ্ছে। এত নির্যাতনের পরও এদের অন্তর তৃপ্ত হতো না। অনেককে নির্যাতন শেষে আধমরা করে রুমের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিত। মৃতপ্রায় তৃষ্ণার্ত এক শিক্ষার্থী পানি চাইলে তাকে পানির বদলে ওই কুকুরগুলো নিজের প্রস্রাব দিয়ে বলে, এই নে পানি না আমার প্রস্রাব খা। ভাবা যায় কতটা পশুত্বে পরিপূর্ণ ছিল এদের মস্তিষ্ক?
রক্তাক্ত জুলাই, বাংলাদেশের অধ্যায়ে অঘোষিত আর এক স্বাধীনতার নাম, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই বাকস্বাধীনতা, এই কবিতার বই আপনাকে আন্দোলনের মাঠে নিয়ে যাবে, আপনার চোখ ছল ছল করে উঠবে, এই কবিতার বই নিপীড়িত মানুষের কথা বলবে, জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেই কথা বলবে, অবশেষে ভালোবাসার স্পর্শে আপনাকে শীতল করবে ! রক্তাক্ত জুলাই, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি অমর করে রাখবে এই বই , যারা শহীদ হয়েছেন, নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়েছে, যারা শরীরের অঙ্গ হারিয়েছেন, যারা জুলাইয়ের আন্দোলনকে গতিশীল করেছেন রাজপথ কিংবা অনলাইনে, তাদের সাক্ষী এই রক্তাক্ত জুলাই হয়ে থাকবে !
এ সংকলনের একটি আকর্ষণের দিক হলো এখানে নেই কোনো প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাত যশওয়ালা কবি। মাঠের কর্মী ও কবিরাই শব্দে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন জুলাই বিপ্লবের ইলহাম।
বিপ্লবী কবিকুলকে আহ্বান করে উত্তাল দিনগুলোতে লেখা।
‘কবি, রাজপথে কবিতা আঁকো’ শিরোনামে লেখা একটি কবিতার কিছু পঙ্ক্তি দিয়ে আলাপ শেষ করি:
আজ রাজপথ খালি; জরুরি অবস্থা আর কারফিউতে সব ভীতু কবিদল, পদ্যকার, ছড়াকার ঘরে ঘুমুচ্ছে ঘোরে-বেঘোরে।
কবিতা লিখতে না পারো, ঘরে বসে থেকো না, বের হয়ে যাও পথে-গলিতে, ফুটপাতে অথবা রাজপথে।
পুরো রাজপথ যে তার শূন্য খাতা খুলে বসে আছে— আমার অপেক্ষায়, তোমার অপেক্ষায়। কখন তার পৃষ্ঠায় আমার পা দিয়ে এঁকে দিবো, তোমাদের পা দিয়ে এঁকে দিবে আমার সেই অমর কবিতাটি, তোমাদের সেই অমর কবিতাটি।
এখন আমি ফুটপাত ছেড়ে রাজপথের খোলা পৃষ্ঠায় কবিতা আঁকছি, একটি হাত দিয়ে নয়, দুপায়ে— ছন্দের তালে তালে—