দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে, সময়টা ২০১৮ সাল, ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ। এর ঠিক ছয় মাস আগে প্রায় সাতলাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসে। তখন সবে একটা এনজিওতে জেন্ডার ট্রেইনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। স্বপ্ন ছিল জেন্ডার এন্ড ডাইভার্সিটি নিয়ে কাজ করার। রোজ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খবর পড়তে পড়তে বাড়তে থাকে তাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ। এরপর? অনলাইনেই একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইন্টার্ভিউ দিয়ে, সাতদিনের নোটিশে তখকার অফিসে রিজাইন দিয়ে চলে যাই কক্সবাজার মাত্র তিনমাসের কন্ট্রাক্টে। কুতুপালংয়ের পাহাড়ের ওপরে দাঁড়ালে দূরে মায়ানমারের পাহাড় দেখা যায়। একদিন একটা কেইস ভিজিটে যাবার সময় হটাত খেয়াল করলাম, একজন বৃদ্ধ পাহাড়ের উপরে পথের পাশে বসে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন দূরে মায়ানমারের পাহাড়গুলোর দিকে। একদল মেঘ ছুটে আসছে সেদিক থেকে। মিনিটখানেকের জন্য থেমে যাই। বৃদ্ধের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি, তিনি কাঁদছেন। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ঝড় শুরু হয়েছিল সেদিন। দূর থেকে আসা মেঘের দিকে তাকিয়ে হটাত কয়েকটি লাইন মাথায় আঘাত করে-‘মেঘেদের কোনো দেশ নেই, তারা কাঁটাতারে বন্দী হয়নি। ভেসে ভেসে যে দেশের সীমানায় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, সেটাই তাদের কবর’। রোহিঙ্গাদের কোনো জাতীয়তা নেই। মায়ানমার সরকার তাদেরকে নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে অস্বীকার করেছে। তবে তাদের পরিচয় কী? তারা কোন দেশের নাগরিক? এ মুহুর্তে কক্সবাজারে প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। গত তিনদশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পালিয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে এবং অধিকাংশ বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর সমান্তরালে টেকনাফ-কক্সবাজারে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) রাখাইন অঞ্চলের পশ্চিমাংশে পুলিশ ও আর্মি পোস্টে আক্রমণ করেছিল। যার দরুন, পুর্বপরিকল্পিত ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশান’ এর সূত্র ধরে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করা হয়। জাতিসংঘ একে ‘দ্য টেক্সটবুক এক্সামপল অফ এথনিক ক্লিঞ্জিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে ‘রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।’ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার অর্থনৈতিক সহায়তায় রোহিঙ্গারা বর্তমানে টিকে আছে। রোহিঙ্গাদের শরনার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার এখনো শরনার্থী হিসেবে গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গারা Forcibly Displaced Myanmar Nationals (FDMNs)।
| 
                                                         Writer  | 
                                                    |
| 
                                                         Publisher  | 
                                                    |
| 
                                                     ISBN  | 
                                                
                                                     9789849481584  | 
                                            
| 
                                                     Language  | 
                                                
                                                     বাংলা  | 
                                            
| 
                                                     Country  | 
                                                
                                                     Bangladesh  | 
                                            
| 
                                                     Format  | 
                                                
                                                     হার্ডব্যাক  | 
                                            
| 
                                                     First Published  | 
                                                
                                                     অমর একুশে বইমেলা ২০২১  | 
                                            
| 
                                                     Pages  | 
                                                
                                                     160  | 
                                            
দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে, সময়টা ২০১৮ সাল, ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ। এর ঠিক ছয় মাস আগে প্রায় সাতলাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসে। তখন সবে একটা এনজিওতে জেন্ডার ট্রেইনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। স্বপ্ন ছিল জেন্ডার এন্ড ডাইভার্সিটি নিয়ে কাজ করার। রোজ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খবর পড়তে পড়তে বাড়তে থাকে তাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ। এরপর? অনলাইনেই একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইন্টার্ভিউ দিয়ে, সাতদিনের নোটিশে তখকার অফিসে রিজাইন দিয়ে চলে যাই কক্সবাজার মাত্র তিনমাসের কন্ট্রাক্টে। কুতুপালংয়ের পাহাড়ের ওপরে দাঁড়ালে দূরে মায়ানমারের পাহাড় দেখা যায়। একদিন একটা কেইস ভিজিটে যাবার সময় হটাত খেয়াল করলাম, একজন বৃদ্ধ পাহাড়ের উপরে পথের পাশে বসে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন দূরে মায়ানমারের পাহাড়গুলোর দিকে। একদল মেঘ ছুটে আসছে সেদিক থেকে। মিনিটখানেকের জন্য থেমে যাই। বৃদ্ধের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি, তিনি কাঁদছেন। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ঝড় শুরু হয়েছিল সেদিন। দূর থেকে আসা মেঘের দিকে তাকিয়ে হটাত কয়েকটি লাইন মাথায় আঘাত করে-‘মেঘেদের কোনো দেশ নেই, তারা কাঁটাতারে বন্দী হয়নি। ভেসে ভেসে যে দেশের সীমানায় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, সেটাই তাদের কবর’। রোহিঙ্গাদের কোনো জাতীয়তা নেই। মায়ানমার সরকার তাদেরকে নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে অস্বীকার করেছে। তবে তাদের পরিচয় কী? তারা কোন দেশের নাগরিক? এ মুহুর্তে কক্সবাজারে প্রায় এগারো লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। গত তিনদশক ধরে মায়ানমার সরকারের সহিংস নির্যাতন থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পালিয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে এবং অধিকাংশ বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদীর সমান্তরালে টেকনাফ-কক্সবাজারে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) রাখাইন অঞ্চলের পশ্চিমাংশে পুলিশ ও আর্মি পোস্টে আক্রমণ করেছিল। যার দরুন, পুর্বপরিকল্পিত ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশান’ এর সূত্র ধরে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করা হয়। জাতিসংঘ একে ‘দ্য টেক্সটবুক এক্সামপল অফ এথনিক ক্লিঞ্জিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে ‘রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।’ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার অর্থনৈতিক সহায়তায় রোহিঙ্গারা বর্তমানে টিকে আছে। রোহিঙ্গাদের শরনার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার এখনো শরনার্থী হিসেবে গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গারা Forcibly Displaced Myanmar Nationals (FDMNs)।
| 
                                                         Writer  | 
                                                    |
| 
                                                         Publisher  | 
                                                    |
| 
                                                     ISBN  | 
                                                
                                                     9789849481584  | 
                                            
| 
                                                     Language  | 
                                                
                                                     বাংলা  | 
                                            
| 
                                                     Country  | 
                                                
                                                     Bangladesh  | 
                                            
| 
                                                     Format  | 
                                                
                                                     হার্ডব্যাক  | 
                                            
| 
                                                     First Published  | 
                                                
                                                     অমর একুশে বইমেলা ২০২১  | 
                                            
| 
                                                     Pages  | 
                                                
                                                     160  |