মরিয়ম পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে বসে আছে। ঘাটের উপর শিউলি গাছ। গাছের পাতায় সঞ্চিত শিশিরের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে পড়ছে। আকাশে চাঁদ নেই, নেই কোনো তারাও। তবু চারদিকে ফুটফুটে জোছনা। সেই জোছনা এতটাই সর্বপ্লাবী যে দূরের মাঠ পর্যন্ত দেখা যায়। মরিয়মের দৃষ্টি দিগন্তের শেষ সীমায়। হাতজোড়া আজিজালের হাতে। মরিয়ম বলল— আমাদের হাবিয়া কত বড়ো হয়ে গেছে, তাই না?
— হ্যাঁ, দেখতে ঠিক তোমার মতো হয়েছে।
— মেয়ে তো মায়ের মতোই হবে।
— হুম, তাই তো হবে।
— আপনার কি জেলখানায় কষ্ট হয়?
— নিজের জন্য হয় না। হাবিয়ার জন্য হয়। তুমি নাই, আমি থেকেও নাই। মেয়েটা একদম একা।
— হাবিয়ার জন্য মোটেই দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আপনি না ওর নাম রেখেছেন হাবিয়া, জাহান্নামের নাম— যেন দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট ওর কাছে তুচ্ছ মনে হয়। জাহান্নামের কাছে যেমন জাগতিক সব ব্যথা-বেদনা নগন্য।
আজিজাল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল— আমি তো এটাও চেয়েছিলাম কখনো দুঃখ-কষ্ট যেন তাকে স্পর্শই না করে।
মরিয়ম আজিজালের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল— করুক না একটু লড়াই। আগুনে না পুড়লে সোনা যেমন খাঁটি হয় না তেমনি দুঃখ-কষ্ট ছাড়া মানুষও শুদ্ধ হয় না। স্রষ্টা যদি আপনার নামের কারণে ওকে আগুনে পোড়ান তাহলে আমার নামের জন্য অনেক বড়ো মানুষ বানাবেন।
— সত্যিই?
— হুম।
— তুমি কেমন আছো মরিয়ম?
— অপেক্ষায়।
— কার?
মরিয়ম জবাব দিলো না। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেল। আজিজাল তাকে ডাকল— একবার, দুইবার, তিনবার। মরিয়ম সাড়া দিলো না। গাছপালার ফাঁক গলে আসা নকশাদার জোছনা মেখে এগিয়ে চলল গন্তব্যে।