মননরেখার ‘বাংলার বাহন’ সংখ্যায় বাংলাদেশের প্রাচীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিলুপ্তপ্রায় যানবাহনের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অতীতে মানুষ তাদের নিত্যদিনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নানান প্রয়োজনে দূরবর্তী স্থানে যাতায়াতের জন্য তাদের ভৌগোলিক পরিবেশ উপযোগী বিভিন্ন বাহন ব্যবহার করতো। সেগুলোর রূপ কেমন ছিল এবং তাকে কেন্দ্র করে সামাজিক কর্মকাণ্ড কীভাবে সম্পন্ন করা হতো, তার বিবর্তন বা উৎকর্ষতা-ই বা কীভাবে হয়েছে—তা জানতেই বাংলার সামাজিক ইতিহাসের বিগত অধ্যায়গুলোতে চোখ রাখা হয়েছে।
লিখিত ইতিহাসের পাশাপাশি লোক-বয়ানের মাধ্যমেও সেই সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার স্থানীয় এক একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এই সংখ্যায়। মাঠ পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে মৌখিক বিবরণ। এক-একটি অঞ্চলের মানুষের সামাজিক স্মৃতিপরম্পরা ও প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা এক এক রকম। বিচিত্র এইসব অভিজ্ঞতা ও তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সকলের কথায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বাংলা অঞ্চলের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলপথে যোগাযোগ ছিল। গবেষকগণ মনে করেন, অন্তত দুই হাজার বছর আগে জলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হয় বাংলার সঙ্গে। নদীপথে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য নানা রুট গড়ে ওঠে। বন্দর হিসেবে প্রাচীন বাংলায় চন্দ্রকেতুগড়, তাম্রলিপ্তি, উয়ারী-বটেশ্বর ইত্যাদি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে চীনের টাংকিং থেকে তাম্রলিপ্তি পর্যন্ত একটি বাণিজ্যপথ ছিল। সুমাত্রা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম পর্যন্ত পণ্যবাণিজ্য হতো। এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, মালদ্বীপ ও আফ্রিকার উপকূলের সঙ্গেও সমুদ্রপথে যোগাযোগ ছিল বাংলার।