৪৮-৭২ ঘন্টায় ক্যাশ অন ডেলিভারি। ০১​৫​৮১১০০০০১​

 Cover Image Of Single Author Page
শাহেদ আলী / sahed ali

শাহেদ আলী

জন্ম (১৯২৫–২০০১) সাল। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, যিনি বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজের মনস্তত্ত্ব, সংকট ও সামাজিক রূপান্তর নিয়ে লিখে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচনায় গ্রামীণ জীবন ও সমাজবাস্তবতা গভীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বাংলা ভাষায় মননচর্চার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তার বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ জলছবি, পথ ও পাথার, তৃষ্ণা এবং উপন্যাস গাঁওবুড়ো বাংলা কথাসাহিত্যে স্বাতন্ত্র্যপ্রাপ্ত রচনা হিসেবে স্বীকৃত। সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেন, যা তাঁর চিন্তার বাস্তব ভিত্তি গড়ে দেয়। শাহেদ আলী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননায় ভূষিত হন। একজন ‘ইন্টেলিছুয়াল’ হিসেবে তিনি কেবল গল্পকারই নন, বরং বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে এক নিবেদিত সাহিত্যচিন্তক। তাঁর সাহিত্য বাঙালি মুসলমান সমাজের আত্মদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি।

Cover Image Of Single Author Page

🎓 শিক্ষাজীবন ও প্রারম্ভিক চর্চা

তাঁর  শিক্ষা জীবন শুরু হয় সিলেটের কানাইঘাট হাইস্কুলে এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি অর্জনে গিয়ে গড়ায়। উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি শিক্ষকতা ও গবেষণাকর্মে যুক্ত হন। শুরু থেকেই তাঁর মধ্যে ভাষার গঠন ও সাহিত্যিক রূপান্তর নিয়ে গভীর আগ্রহ ছিল।


✍️ সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা

তাঁর সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯৩০-এর দশকে। তবে ১৯৫০-৬০-এর দশকে তাঁর গল্প ও উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন বাস্তবতাবোধের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত উপন্যাস "পিঞ্জর" (১৯৬০) পূর্ববাংলার গ্রামীণ সমাজের অন্তর্গত টানাপোড়েন ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে। এই উপন্যাস কেবল সামাজিক বাস্তবতাকে নয়, জাতি ও শ্রেণি চেতনার বিকাশকেও অনুধাবন করে। তাঁর সাহিত্য ভাষার শুদ্ধতা, সংযমিত বর্ণনা এবং বাস্তবজীবনের নিখুঁত পর্যবেক্ষণের কারণে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে।


🧠 ভাষা ও চিন্তার জগতে

তাঁর  ভাষাবিজ্ঞান নিয়েও কাজ করেছেন এবং বাংলা ভাষার সুরক্ষা ও উৎকর্ষে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ভাষার আঞ্চলিক ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝতেন এবং শিক্ষায় মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি এক সক্রিয় সমর্থক হিসেবে সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেন।


📚 শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান

শিক্ষকতা ছিল তাঁর আজীবনের পেশা ও নেশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। একজন গবেষক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর অবদান প্রজন্মকে আলোকিত করেছে।



🏆 পুরস্কার ও স্বীকৃতি

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হন, যার মধ্যে রয়েছে:

​বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬০)

​একুশে পদক (১৯৮৯)


🧭 ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অবদান

তাঁর লেখনী এবং চিন্তা ১৯৪৭-৭১-এর পাকিস্তানি ও পূর্ব পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব, ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি ছিলেন সেই ধারার বুদ্ধিজীবী যাঁরা সংস্কৃতি ও ভাষার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করতে শিখেছিলেন।


🔍 সর্বশেষে বলাযায়—

তিনি একজন প্রথাসিদ্ধ সাহিত্যিকের চেয়ে অনেক বেশি ছিলেন—তিনি ছিলেন এক বৌদ্ধিক পথিক, যিনি ভাষা, সমাজ ও সাহিত্যকে একসাথে জারিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর বৌদ্ধিক উত্তরাধিকার আজো আমাদের সাহিত্য ও সমাজ ভাবনায় প্রাসঙ্গিক ও অনুপম।

Cover Image Of Single Author Page
WhatsApp Icon